SAKIB

SAKIB

3 个月前
2
使用量
0
分享次数
0
总点赞数
0
收藏次数
使用声音

描述

ইতিহাসের পাতায় যদি কোনো নাম সবচেয়ে রহস্যময় আর অনুপ্রেরণাদায়ক হয়, তাহলে সেটা হলো মহান আলেকজান্ডারের নাম। কল্পনা করুন একজন বিশ বছর বয়সী যুবকের, যে তার ছোট্ট মেসিডোনিয়ান রাজ্য থেকে বেরিয়ে মাত্র তেরো বছরে অর্ধ পৃথিবী জয় করে নিয়েছিল। এটা কোনো জাদু ছিল না, বরং ছিল যুদ্ধের এক অনন্য কলা। আখের কেমন করে একজন ব্যক্তি তার কৌশলে পুরো বিশ্বের মানচিত্র বদলে দিয়েছিল? কী ছিল তার যুদ্ধের সেই গোপন পদ্ধতি যা আজও সামরিক একাডেমিতে পড়ানো হয়? খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর সময়টা ছিল, যখন পৃথিবী ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত ছিল। গ্রিসে নগর-রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মধ্যে লড়াই করছিল, পারস্যের বিশাল সাম্রাজ্য নিজের শক্তির নেশায় মত্ত ছিল, আর ভারতে অগণিত রাজা নিজ নিজ এলাকায় শাসন করছিলেন। এই অরাজকতার মাঝেই, উত্তর গ্রিসের একটি ছোট রাজ্য মেসিডোনিয়ায় জন্ম নিয়েছিল এমন এক যোদ্ধা, যে ইতিহাসের ধারা চিরতরে মোড় দিয়ে দিতে যাচ্ছিল। আলেকজান্ডারের সফলতার রহস্য এটা ছিল না যে তার কাছে সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনী ছিল বা সবচেয়ে উন্নত অস্ত্র ছিল। প্রকৃতপক্ষে, তার সেনাবাহিনী প্রায়ই শত্রুদের চেয়ে ছোট হতো। আসল কথা হলো আলেকজান্ডার যুদ্ধকে একটি শিল্পের মতো দেখতেন - এমন একটি শিল্প যাতে কৌশল, মনোবিজ্ঞান, উদ্ভাবন আর নেতৃত্ব সবকিছু একসাথে মিলে যাদুর কাজ করতো। কিন্তু এই গল্প আলেকজান্ডারের জন্ম থেকে নয়, বরং তার বাবা দ্বিতীয় ফিলিপ থেকে শুরু হয়। ফিলিপ ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা এবং তিনি যুদ্ধের জগতে একটা বিপ্লব এনে দিয়েছিলেন। আলেকজান্ডার যখন রাজা হলেন, ততক্ষণে তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ আর দক্ষ সেনাবাহিনী। ফিলিপের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার ছিল মেসিডোনিয়ান ফ্যালানক্স। এটা কোনো সাধারণ যুদ্ধ ব্যূহ ছিল না, বরং ছিল বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ডিজাইন করা একটি যুদ্ধ তন্ত্র। কল্পনা করুন ষোলটি সারিতে দাঁড়ানো সৈনিকদের, যাদের হাতে আছে ১৮ ফুট লম্বা বর্শা। এই ফ্যালানক্স যখন এগিয়ে যেত, তখন এটা একটা চলমান দুর্গের মতো দেখাতো। শত্রু সেনাবাহিনী এই বর্শার দেয়াল ভেদ করতে অক্ষম হয়ে যেত। কিন্তু ফিলিপের অবদান এখানেই থামেনি। তিনি প্রথমবারের মতো একটি পেশাদার সেনাবাহিনী গঠন করেছিলেন। এর মানে হলো সৈনিকরা সারা বছর প্রশিক্ষণ নিত, শুধু যুদ্ধের সময় নয়। তিনি অশ্বারোহী, পদাতিক আর তীরন্দাজদের একসাথে লড়তে শেখিয়েছিলেন। এই 'কম্বাইন্ড আর্মস'-এর কৌশল আজকের আধুনিক সেনাবাহিনীরও ভিত্তি। আলেকজান্ডার তার বাবার কাছ থেকে এসব কিছু শিখেছিলেন, কিন্তু তিনি এটাকে আরও পরিশীলিত করে তুলেছিলেন। তার সেনাবাহিনী একটা ঘড়ির মতো কাজ করতো, যেখানে প্রতিটা যন্ত্রাংশ নিজের জায়গায় নিখুঁতভাবে কাজ করতো। মেসিডোনিয়ান ফ্যালানক্স কেন্দ্রে শত্রুকে ব্যস্ত রাখতো, আর আলেকজান্ডার তার কম্প্যানিয়ন ক্যাভালরি নিয়ে কোনো দুর্বল জায়গায় আক্রমণ করতেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আলেকজান্ডার শুধু একজন দক্ষ সেনাপতিই ছিলেন না, বরং তার মানসিকতাই ছিল আলাদা। অন্য রাজারা যখন শুধু নিজেদের রাজ্যের সীমানা রক্ষা করতে ব্যস্ত ছিলেন, আলেকজান্ডারের স্বপ্ন ছিল পুরো পৃথিবী জয় করা। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা কোথা থেকে এসেছিল? এর উত্তর মেলে তার শিক্ষায়। আলেকজান্ডারের গুরু ছিলেন মহান দার্শনিক অ্যারিস্টটল। অ্যারিস্টটল আলেকজান্ডারকে শুধু যুদ্ধের কলাই শেখাননি, বরং রাজনীতি, ভূগোল, জ্যোতির্বিজ্ঞান আর দর্শনেরও গভীর বোঝাপড়া দিয়েছিলেন। আলেকজান্ডার জানতেন যে যুদ্ধ জেতা শুধু তলোয়ারের খেলা নয়, বরং এতে মস্তিষ্কের প্রয়োজন হয়। আলেকজান্ডারের আদর্শ ছিলেন হোমারের মহাকাব্য ইলিয়াডের নায়ক অ্যাকিলিস। তিনি সবসময় ইলিয়াডের একটি কপি নিজের সাথে রাখতেন আর অ্যাকিলিসের মতো অমর যশ পাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। এই মানসিকতা তাকে সেই সাহস দিয়েছিল যা একজন সাধারণ রাজার থাকে না। তিনি সবসময় যুদ্ধে সবার আগে লড়তেন, যার ফলে তার সৈনিকদের মনোবল বজায় থাকতো। কিন্তু আলেকজান্ডারের আসল প্রতিভা ছিল মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে। তিনি জানতেন ভয়কে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়। যখন তিনি কোনো নতুন এলাকায় পৌঁছাতেন, তখনই প্রথমেই নিজের ছবি একজন অপরাজেয় যোদ্ধার তৈরি করে দিতেন। তার খ্যাতি তার চেয়েও আগে পৌঁছে যেত, আর অনেক সময় শত্রুরা লড়াইয়ের আগেই হেরে যেত। এই মানসিকতা নিয়েই আলেকজান্ডার তার প্রথম বড় অভিযান শুরু করেছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৪ সালে, মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি তার সেনাবাহিনী নিয়ে এশিয়া মাইনরের দিকে রওনা হন। তার প্রথম বড় পরীক্ষা ছিল গ্রানিকাস নদীর তীরে পারসিকদের সাথে মোকাবেলা। গ্রানিকাসের যুদ্ধ দেখিয়ে দিয়েছিল যে আলেকজান্ডার কোনো সাধারণ সেনাপতি ছিলেন না। পারসিক সেনাবাহিনী নদীর ওপারে অবস্থান নিয়েছিল, যা ছিল একটা খুব মজবুত অবস্থান। নদী পার করাই ছিল একটা চ্যালেঞ্জ, তার ওপর পারসিক অশ্বারোহীরা অপেক্ষায় ছিল। কোনো অভিজ্ঞ সেনাপতি পরামর্শ দিতেন রাতের জন্য অপেক্ষা করতে অথবা অন্য কোনো পথ খুঁজতে। কিন্তু আলেকজান্ডার সিদ্ধান্ত নিলেন সরাসরি আক্রমণ করবেন। তার কৌশল ছিল সরল কিন্তু মারাত্মক। প্রথমে তিনি তার বর্শা নিক্ষেপকারীদের এগিয়ে পাঠালেন, যারা পারসিক অশ্বারোহীদের বিরক্ত করল। তারপর তিনি তার সবচেয়ে সাহসী অশ্বারোহীদের নিয়ে নদী পার হওয়ার চেষ্টা করলেন। এখানে আলেকজান্ডারের ব্যক্তিগত সাহস কাজে আসল। তিনি নিজে ছিলেন সবার আগে, তার চকচকে বর্মে। পারসিক সৈনিকরা তাকে চিনে ফেলল আর তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। একজন পারসিক সেনাপতি তার মাথায় কুড়াল দিয়ে আঘাত করেছিল, যা তার হেলমেট ভেঙে দিত, কিন্তু তার বন্ধু ক্লিটাস শেষ মুহূর্তে তার প্রাণ বাঁচিয়েছিল। এই ব্যক্তিগত সাহসের ফল হলো মেসিডোনিয়ান সৈনিকদের মধ্যে উৎসাহ এসে গেল। তারা বিপুল সংখ্যায় নদী পার হতে লাগল। খুব তাড়াতাড়ি পুরো ফ্যালানক্স নদীর ওপারে পৌঁছে গেল, আর পারসিক সেনাবাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। এই জয় শুধু একটা যুদ্ধ ছিল না, বরং আলেকজান্ডারের ভবিষ্যৎ অভিযানের জন্য আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি ছিল। গ্রানিকাসের জয়ের পর আলেকজান্ডার এশিয়া মাইনরের অনেক শহর দখল করে নিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরবর্তী বড় চ্যালেঞ্জ ছিল টায়ার শহরের অবরোধ। এই অবরোধ দেখাতে যাচ্ছিল যে আলেকজান্ডার শুধু খোলা মাঠের যোদ্ধা ছিলেন না, বরং ইঞ্জিনিয়ারিং আর লজিস্টিক্সেও তার প্রতিভা ছিল অদ্বিতীয়। টায়ার শহর ছিল একটি দ্বীপে অবস্থিত, মূল ভূখণ্ড থেকে আধা মাইল দূরে। এটা ছিল ফিনিশিয় ব্যবসায়ীদের মজবুত দুর্গ, যা কখনো কোনো আক্রমণকারীর কাছে মাথা নত করেনি। শহরের দেয়াল সমুদ্র থেকে ১৫০ ফুট উঁচু ছিল, আর তাদের ছিল মজবুত নৌবাহিনীও। কোনো সাধারণ সেনাপতির কাছে এটা অসম্ভব মনে হতো। কিন্তু আলেকজান্ডার এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যা ইতিহাসে অদ্বিতীয়। তিনি ঠিক করলেন সমুদ্রে একটা কজওয়ে অর্থাৎ সেতু বানাবেন, যা মূল ভূখণ্ডকে দ্বীপের সাথে যোগ করবে। এই কাজ এত বড় ছিল যে আজকের সময়েও একে ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্ময় বলা হবে। আলেকজান্ডার তার সৈনিকদের মজদুর বানিয়ে দিলেন। তারা পাহাড় থেকে পাথর আনত, পুরানো ভবন ভেঙে ফেলত, আর কাঠ কাটত। ধীরে ধীরে সমুদ্রে একটা কৃত্রিম সেতু তৈরি হতে লাগল। টায়রের লোকেরা এটা ঠেকানোর চেষ্টা করেছিল। তারা তাদের নৌকা নিয়ে এসে কাজ করা লোকদের ওপর আক্রমণ করত। তারা আগুনের জাহাজ পাঠিয়ে কজওয়ে পোড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আলেকজান্ডার হার মানেননি। তিনি কজওয়ে চওড়া করালেন আর তার ওপর নিরাপত্তার জন্য মিনার বানালেন। সাত মাসের পরিশ্রমের পর কজওয়ে শেষ হলো। এখন আলেকজান্ডার অবরোধের যন্ত্র লাগালেন - বিশাল গুলতি, রাম আর অবরোধের মিনার। এর সাথে তিনি অন্য ফিনিশিয় শহর থেকেও নৌবাহিনী জোগাড় করলেন, যার ফলে টায়রের সমুদ্রপথও বন্ধ হয়ে গেল। যখন অবশেষে টায়র পতন হলো, তখন এটা শুধু একটা সামরিক জয় ছিল না। এটা দেখাতো যে আলেকজান্ডারের কাছে অসীম ধৈর্য আর উদ্ভাবনের ক্ষমতা ছিল। তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে কোনো দুর্গই অজেয় নয়, যদি আপনার কাছে সঠিক পরিকল্পনা আর দৃঢ়তা থাকে। আজও টায়রের সেই কজওয়ে বর্তমান, আর টায়র এখন আর দ্বীপ নয় বরং মূল ভূখণ্ডের অংশ। এটা আলেকজান্ডারের ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিভার একটি স্থায়ী প্রমাণ। এখন কথা আসে আলেকজান্ডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধের - ইসুসের যুদ্ধ। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৩ সালে এটা ছিল সেই মোকাবেলা যা ঠিক করেছিল এশিয়ার ভবিষ্যৎ কেমন হবে। সামনে ছিলেন পারস্যের মহান সম্রাট তৃতীয় দারিয়ুস, যিনি নিজে তার বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে এসেছিলেন আলেকজান্ডারকে থামাতে। দারিয়ুসের সেনাবাহিনীতে প্রায় দেড় লক্ষ সৈনিক ছিল, আর আলেকজান্ডারের কাছে ছিল মাত্র ৩৫,০০০ সৈনিক। এটা একটা অসম মোকাবেলা মনে হচ্ছিল। দারিয়ুস এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে তিনি তার মা, স্ত্রী আর সন্তানদেরও যুদ্ধের কাছে নিয়ে এসেছিলেন, এটা দেখানোর জন্য যে তিনি নিশ্চিত জয়ের অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু আলেকজান্ডারের কাছে সেনাবাহিনীর আকার কোনো মানে রাখত না। তিনি জমির বিস্তারিত অধ্যয়ন করেছিলেন। ইসুসের প্রান্তর সংকীর্ণ ছিল, যার ফলে দারিয়ুস তার সংখ্যার সুবিধা নিতে পারতেন না। পিনারাস নদী দুই সেনাবাহিনীর মাঝে বয়ে যাচ্ছিল, যা ছিল একটা প্রাকৃতিক বাধা। আলেকজান্ডারের কৌশল ছিল শুদ্ধ প্রতিভার নমুনা। তিনি তার ফ্যালানক্স কেন্দ্রে রাখলেন, কিন্তু তার আসল আক্রমণ হতে যাচ্ছিল ডান দিক থেকে। তিনি জানতেন পূর্বীয় ঐতিহ্য অনুসারে, দারিয়ুস তার সেনাবাহিনীর কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকবেন। আলেকজান্ডারের লক্ষ্য ছিল সরাসরি দারিয়ুসের কাছে পৌঁছানো। যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই আলেকজান্ডার তার কম্প্যানিয়ন ক্যাভালরি নিয়ে একটা তির্যক আক্রমণ করলেন। এটা ছিল 'অবলিক অ্যাটাক'-এর কৌশল, যাতে আপনি শত্রুর লাইনের একটা কোণে আপনার পুরো শক্তি লাগিয়ে দেন। যখন পারসিক সেনাবাহিনীর বাম অংশে ভারী চাপ পড়ছিল, বাকি সেনাবাহিনী কেন্দ্রে ব্যস্ত ছিল। আলেকজান্ডারের ব্যক্তিগত সাহস এখানেও দেখা গেল। তিনি তার চকচকে বর্মে সবার আগে লড়ছিলেন, যার ফলে শত্রু আর বন্ধু দুজনেই তাকে দেখতে পাচ্ছিল। তার লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট - দারিয়ুসের কাছে পৌঁছানো। আর ধীরে ধীরে তার ক্যাভালরি পারসিক লাইনে ফাঁক করে দিল। যখন আলেকজান্ডার দারিয়ুসের কাছে পৌঁছাচ্ছিলেন, তখন দারিয়ুসের আত্মবিশ্বাস ভেঙে গেল। পারসিক ঐতিহ্যে রাজা যুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে লড়তেন না, কিন্তু এখানে সামনে ছিল একজন পাগল মেসিডোনিয়ান রাজা যে নিজে তলোয়ার নিয়ে দৌড়ে আসছে। দারিয়ুস রথ ঘুরিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। রাজার পালিয়ে যাওয়ার পারসিক সেনাবাহিনীর ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ছিল মারাত্মক। যদিও তারা সংখ্যায় বেশি ছিল, কিন্তু তাদের নেতৃত্ব শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেনাবাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল, আর আলেকজান্ডারের জয় হলো। ইসুসের জয়ের পর আলেকজান্ডারের হাতে এল দারিয়ুসের পুরো পরিবার। কিন্তু এখানে আলেকজান্ডার তার রাজনৈতিক বুদ্ধি দেখালেন। তিনি দারিয়ুসের পরিবারের সাথে সম্মানজনক আচরণ করলেন, যার ফলে পারসিক জনগণের মধ্যে তার ছবি একজন বর্বর আক্রমণকারীর না হয়ে একজন ন্যায়পরায়ণ রাজার হলো। কিন্তু আলেকজান্ডারের সবচেয়ে মহান সামরিক অর্জন এখনো বাকি ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩১ সালে গৌগামেলার প্রান্তরে সেই মোকাবেলা হয়েছিল যা পারসিক সাম্রাজ্যের সমাপ্তি ঘটিয়েছিল। এই যুদ্ধ শুধু কৌশলগত দিক থেকে নয় বরং ঐতিহাসিক প্রভাবের দিক থেকেও আলেকজান্ডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জয় ছিল। দারিয়ুস এবার কোনো ভুল করেননি। তিনি নিজেই গৌগামেলার প্রান্তর বেছে নিয়েছিলেন - একটা সমতল, চওড়া এলাকা যেখানে তার বিশাল সেনাবাহিনী পুরো শক্তি দেখাতে পারত। এবার তার কাছে ছিল ২,৫০,০০০ সৈনিক, যাদের মধ্যে হাতি, রথ, আর বিভিন্ন এলাকার যোদ্ধা অন্তর্ভুক্ত ছিল। সবচেয়ে ভয়ংকর জিনিস ছিল পারসিক সেনাবাহিনীর স্কিথ রথ, যাদের চাকায় ধারালো ব্লেড লাগানো ছিল। এই রথ শত্রুর লাইনে ঢুকে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারত। দারিয়ুসের পরিকল্পনা ছিল প্রথমে এই রথ মেসিডোনিয়ান ফ্যালানক্স ভাঙবে, তারপর হাতি আর অশ্বারোহী মিলে বাকি কাজ সেরে দেবে। আলেকজান্ডার জানতেন এটা তার সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। তার কাছে ছিল মাত্র ৪৭,০০০ সৈনিক - শত্রুর চেয়ে পাঁচগুণ কম। কিন্তু এতদিনের সব যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আর তার সৈনিকদের বিশ্বাস তার সাথে ছিল। আলেকজান্ডারের কৌশলের ভিত্তি ছিল নমনীয়তা। তিনি তার সেনাবাহিনীকে এমনভাবে সাজালেন যে যেকোনো দিক থেকে আসা আক্রমণের মোকাবেলা করতে পারে। তার ফ্যালানক্সের দুপাশে হালকা পদাতিক সেনা ছিল, যারা প্রয়োজনে পিছু হটতে পারত। যখন স্কিথ রথ আক্রমণ করে এল, তখন আলেকজান্ডার একটা চমৎকার কৌশল ব্যবহার করলেন। তার সৈনিকরা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের লাইনে জায়গা ছেড়ে দিল, যার ফলে রথ মাঝ দিয়ে চলে গেল কাউকে ক্ষতি না করেই। রথের পেছন থেকে মেসিডোনিয়ান সৈনিকরা রথচালকদের নিশানা করল। কিন্তু আসল খেলা এখনো শুরু হতে বাকি। আলেকজান্ডার দেখানোর জন্য তার ডান দিকের সেনাবাহিনী এতটা ছড়িয়ে দিলেন যে দারিয়ুসের মনে হলো তিনি তার ডান অংশ দুর্বল করে ফেলেছেন। দারিয়ুস তার বাম দিকের সেনাবাহিনীকে আলেকজান্ডারের ডান অংশে আক্রমণ করতে পাঠালেন। এটাই ছিল সেই মুহূর্ত যার জন্য আলেকজান্ডার অপেক্ষা করছিলেন। যখনই পারসিক সেনাবাহিনীর বাম অংশ আক্রমণ করল, তাদের কেন্দ্রীয় লাইনে একটা খালি জায়গা তৈরি হলো। আলেকজান্ডার তখনই তার কম্প্যানিয়ন ক্যাভালরি নিয়ে এই খালি জায়গায় ওয়েজ ফর্মেশনে আক্রমণ করলেন। ওয়েজ ফর্মেশন অর্থাৎ ত্রিকোণীয় ব্যূহ - এটা ছিল এমন একটা কৌশল যাতে অশ্বারোহীরা একটা সুচালো ত্রিভুজের আকারে আক্রমণ করত। আলেকজান্ডার ছিলেন সবার আগে, আর তার পেছনে তার সবচেয়ে সাহসী সাথীরা। এই ফর্মেশন শত্রুর লাইনে একটা বর্শার মতো ঢুকে যেত। এবারও আলেকজান্ডারের নিশানা ছিল দারিয়ুস। তিনি এত দ্রুততা আর নির্ভীকতার সাথে এগিয়ে গেলেন যে পারসিক গার্ড ঘাবড়ে গেল। দারিয়ুস দেখলেন সেই পাগল মেসিডোনিয়ান আবার তার দিকে দৌড়ে আসছে, আর এবার সে একেবারে কাছে। ইতিহাসে লেখা আছে দারিয়ুস তার বর্শা আলেকজান্ডারের দিকে ছুড়েছিলেন, কিন্তু নিশানা খুঁজে পায়নি। আলেকজান্ডারের বর্শা দারিয়ুসের রথচালককে লেগেছিল। যখন দারিয়ুস দেখলেন তার রথচালক মারা গেছে আর আলেকজান্ডার মাত্র কয়েক গজ দূরে, তখন তিনি আবার যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। গৌগামেলার এই জয় শুধু একটা যুদ্ধ ছিল না, বরং একটা সাম্রাজ্যের সমাপ্তি আর আরেকটার শুরু ছিল। পারসিক সাম্রাজ্য, যা ২০০ বছর ধরে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল, একদিনেই শেষ হয়ে গেল। আলেকজান্ডার এখন এশিয়ার বাদশাহ। কিন্তু আলেকজান্ডারের প্রতিভা শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি বুঝতেন যে তলোয়ার দিয়ে জেতা রাজ্য শুধু তলোয়ার দিয়ে চালানো যায় না। তার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তিনি শুধু একজন বিজেতা ছিলেন না, বরং একজন কূটনীতিবিদ আর সাংস্কৃতিক সেতুর কাজ করা নেতাও ছিলেন। যখনই আলেকজান্ডার কোনো নতুন এলাকায় পৌঁছাতেন, তিনি প্রথমে সেখানকার মানুষদের সংস্কৃতি অধ্যয়ন করতেন। তিনি পারসিক রাজকীয় ঐতিহ্য গ্রহণ করেছিলেন, স্থানীয় দেবতাদের সম্মান করতেন, এমনকি পারসিক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েদের সাথে বিয়েও করেছিলেন। এটা শুধু রাজনৈতিক চাল ছিল না, বরং তার বিশ্বাস ছিল পূর্ব আর পশ্চিমের সংস্কৃতি মিলিয়ে একটা নতুন সভ্যতা তৈরি করা যায়। আলেকজান্ডারের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের কৌশলও ছিল অদ্বিতীয়। তিনি সবসময় নিজের সম্পর্কে এমন গল্প ছড়াতেন যা তাকে দেবতার সমান করে তুলত। মিশরে তিনি নিজেকে আমোন রা-র পুত্র ঘোষণা করিয়েছিলেন। পারস্যে তিনি আহুরা মাজদার প্রতিনিধি হয়েছিলেন। ভারতে তিনি ডায়োনিসাসের অবতার বলে পরিচিত হয়েছিলেন। এসব শুধু দেখানো ছিল না - এটা ছিল একটা সুচিন্তিত কৌশল যার ফলে মানুষ তাকে সাধারণ মানুষ না ভেবে দৈবিক শক্তি মনে করত। যখন কোনো শহর না লড়েই আত্মসমর্পণ করত, তখন আলেকজান্ডার তার সাথে উদারতা দেখাতেন। কিন্তু যে শহর বিরোধিতা করত, তাদের সাথে তিনি এতটাই কঠোর ব্যবহার করতেন যে তার গল্প দূর-দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেত। এভাবে ভয় আর সম্মানের মিশ্রণে তিনি তার সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। এখন আলেকজান্ডারের নজর ছিল ভারতের ওপর। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ সালে তিনি হিন্দুকুশ পর্বত পার করে ভারতে পৌঁছালেন। এখানে তাকে একেবারে ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ভারতীয় রাজা পোরাস তার সামনে এমন সব কঠিনতা দাঁড় করিয়েছিলেন যার মুখোমুখি তিনি আগে কখনো হননি। হাইডাস্পিজ নদীর তীরে পোরাসের সেনাবাহিনীতে ২০০টি হাতি ছিল। এটা আলেকজান্ডারের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা ছিল, কারণ তিনি আগে কখনো এত বড় পরিসরে হাতির ব্যবহার দেখেননি। হাতি শুধু যুদ্ধের হাতিয়ার ছিল না, বরং তারা মেসিডোনিয়ান ঘোড়াদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতো। মৌসুমী বৃষ্টির সময় ছিল, আর হাইডাস্পিজ নদীতে বন্যা এসেছিল। পোরাস নদীর ওপারে তার সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছিলেন, আর তিনি জানতেন নদী পার হওয়া আলেকজান্ডারের জন্য অত্যন্ত কঠিন হবে। কিন্তু আলেকজান্ডার এখানেও তার চতুরতা দেখালেন। রাতের অন্ধকারে, বৃষ্টি আর ঝড়ের মধ্যে, আলেকজান্ডার একটা প্রতারণার পরিকল্পনা করলেন। তিনি তার সেনাবাহিনীকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করলেন। মূল ক্যাম্পে আগুন জ্বালিয়ে আর স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রেখে তিনি পোরাসকে এই ভ্রম দিলেন যে তিনি এখনো নদীর এপারেই আছেন। এই সময়েই আলেকজান্ডার তার নির্বাচিত সৈনিকদের নিয়ে নদী থেকে ১৮ মাইল ওপরের দিকে গেলেন, যেখানে একটা ছোট দ্বীপ ছিল। এখান থেকে নদী পার হওয়া সহজ ছিল। সকাল হওয়ার আগেই আলেকজান্ডার তার ক্যাভালরি নিয়ে নদীর ওপারে পৌঁছে গিয়েছিলেন। যখন পোরাসের জানা হলো আলেকজান্ডার তার পেছনে এসে গেছেন, তখন তাকে তার সেনাবাহিনী দুই ভাগে ভাগ করতে হলো। এতে তার শক্তি ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। কিন্তু পোরাস হার মানেননি। তিনি তার হাতিদের এগিয়ে দিয়ে আলেকজান্ডারের ক্যাভালরির ওপর আক্রমণ করলেন। এখানে আলেকজান্ডারের অভিযোজন ক্ষমতা দেখা গেল। তিনি দেখলেন ঘোড়ারা হাতি দেখে ভয় পাচ্ছে, তাই তিনি নতুন কৌশল অবলম্বন করলেন। তিনি তার ক্যাভালরিকে হাতিদের পাশ থেকে আক্রমণ করতে বললেন, সামনে থেকে নয়। একসাথে তার তীরন্দাজরা হাতিদের মাহুতদের নিশানা করল। ধীরে ধীরে হাতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে লাগল। মাহুত ছাড়া হাতি নিজেদের সেনাবাহিনীকেই পায়ের তলায় পিষে ফেলতে লাগল। পোরাসের সেনাবাহিনীতে অশান্তি দেখা দিল। কিন্তু পোরাস নিজে শেষ পর্যন্ত লড়ে গেলেন। তিনি একটা বিশাল হাতির ওপর চড়েছিলেন আর মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পরেও যুদ্ধ ছাড়তে রাজি হননি। যখন অবশেষে পোরাসকে বন্দী করা হলো আর আলেকজান্ডারের সামনে আনা হলো, তখন আলেকজান্ডার জিজ্ঞেস করলেন তিনি তার সাথে কেমন ব্যবহার চান। পোরাস গর্বের সাথে উত্তর দিলেন - "একজন রাজার সাথে যেমন ব্যবহার হওয়া উচিত।" আলেকজান্ডার এই উত্তরে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি শুধু পোরাসকে তার রাজ্য ফিরিয়েই দেননি, বরং তাকে আরও এলাকা দিয়েছিলেন। এই ঘটনা আলেকজান্ডারের চরিত্রের আরেকটি দিক দেখায়। তিনি শুধু নিষ্ঠুর বিজেতা ছিলেন না, বরং সাহস আর সম্মানের কদর করতে জানতেন। হাইডাস্পিজের যুদ্ধ তাকে দেখিয়েছিল যে পৃথিবীতে এখনো এমন যোদ্ধা আছেন যারা তার মতোই সাহসী। কিন্তু ভারতে আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনীর অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। ক্রমাগত যুদ্ধ, মৌসুমী বৃষ্টি, আর ঘর থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থাকার ক্লান্তি সৈনিকদের মনোবল ভেঙে দিয়েছিল। হাইফাসিস নদীর তীরে তার সেনাবাহিনী আর এগিয়ে যেতে অস্বীকার করল। প্রথমবার আলেকজান্ডারকে তার সৈনিকদের কাছে মাথা নত করতে হলো। এই ঘটনা দেখায় যে আলেকজান্ডারের সফলতা শুধু তার ব্যক্তিগত প্রতিভার ওপর নির্ভর করত না, বরং তার সৈনিকদের বিশ্বাস আর আত্মত্যাগের ওপরও। যখন এই বিশ্বাস ভেঙে গেল, তখন পৃথিবীর সবচেয়ে মহান বিজেতাকেও থামতে বাধ্য হতে হয়েছিল। আজ যখন আমরা আলেকজান্ডারের যুদ্ধ কৌশল দেখি, তখন পাই যে তার প্রভাব ইতিহাসে চিরস্থায়ী হয়ে আছে। তার পরে আসা মহান সেনাপতিরা - হ্যানিবল, জুলিয়াস সিজার, নেপোলিয়ন - সবাই আলেকজান্ডারের কৌশল অধ্যয়ন করেছেন আর তার থেকে শিখেছেন। হ্যানিবল আলেকজান্ডারের কাছ থেকে শিখেছিলেন কীভাবে ছোট সেনাবাহিনী দিয়ে বড় সেনাবাহিনীকে হারানো যায়। ক্যানির যুদ্ধে হ্যানিবল ডাবল এনভেলপমেন্ট কৌশল ব্যবহার করেছিলেন, যা ছিল আলেকজান্ডারের তির্যক আক্রমণ কৌশলের উন্নত রূপ। জুলিয়াস সিজার আলেকজান্ডারের কাছ থেকে শিখেছিলেন কীভাবে ব্যক্তিগত সাহস আর সৈনিকদের সাথে একাত্মতা স্থাপন করতে হয়। সিজারও সবসময় তার সৈনিকদের সাথে কষ্ট সহ্য করতেন আর যুদ্ধে সবার আগে থাকতেন। নেপোলিয়ন তো আলেকজান্ডারের সবচেয়ে বড় ভক্ত ছিলেন। তিনি আলেকজান্ডারের কাছ থেকে শিখেছিলেন কীভাবে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে শত্রুকে চমকে দেওয়া যায়। নেপোলিয়নের "মার্চ ডিভাইড অ্যান্ড কনকার" কৌশল ছিল আলেকজান্ডারের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত আর নমনীয় কৌশলেরই বিস্তার। আধুনিক সামরিক একাডেমিতে আজও আলেকজান্ডারের কৌশল পড়ানো হয়। তার কৌশলগুলো - কম্বাইন্ড আর্মস, গতিশীলতা, ইঞ্জিনিয়ারিং, মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ - আজকের আধুনিক যুদ্ধেও ততটাই প্রাসঙ্গিক। কিন্তু আলেকজান্ডারের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল তিনি দেখিয়েছিলেন যে যুদ্ধ শুধু হিংসা নয়, বরং একটি শিল্প। এই শিল্পে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন, মনোবিজ্ঞান আর নেতৃত্ব সবকিছুর মিশ্রণ থাকে। তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে শুধু শক্তি দিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় না, বরং বুদ্ধি, সাহস আর দৃঢ়তা দিয়ে জেতা যায়। আজও যখন আমরা আলেকজান্ডারের কথা ভাবি, তখন একটা প্রশ্ন সবসময় ওঠে: তিনি কি সত্যিই একজন প্রতিভাবান কৌশলবিদ ছিলেন, নাকি শুধু ভাগ্যবান ছিলেন? এই বিতর্ক আজও চলে। কিন্তু তেরো বছরের ক্রমাগত অভিযানে ক্রমাগত জয় শুধু ভাগ্য দিয়ে পাওয়া যায় না। আলেকজান্ডারের আসল প্রতিভা ছিল তিনি প্রতিটি পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নিতে পারতেন। গ্রানিকাসে নদী পার হওয়ার সাহস, টায়রে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কমাল, ইসুসে দ্রুত সিদ্ধান্ত, গৌগামেলায় জটিল কৌশল, আর হাইডাস্পিজে নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা - প্রতিটি জায়গায় তিনি আলাদা দক্ষতা দেখিয়েছেন। সম্ভবত আলেকজান্ডারের সবচেয়ে বড় সফলতা ছিল তিনি তার সময়ের সব সীমাবদ্ধতা ভেঙে ফেলেছিলেন। যখন পৃথিবী ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত ছিল, তিনি এমন একটি সাম্রাজ্যের স্বপ্ন দেখেছিলেন যা তিন মহাদেশ জুড়ে বিস্তৃত হবে। যখন লোকে নিজেদের সংস্কৃতিকে শ্রেষ্ঠ মনে করে অন্যদের নিচু দেখাতো, তিনি পূর্ব আর পশ্চিমকে মেলানোর চেষ্টা করেছিলেন। আলেকজান্ডারের গল্প আজও আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় যে অসম্ভব বলে কিছু নেই যদি আপনার কাছে সঠিক কৌশল, অটুট সাহস আর নিজের লক্ষ্যে পূর্ণ বিশ্বাস থাকে। তার যুদ্ধ কৌশল শুধু সামরিক ইতিহাসের অংশ নয়, বরং মানবিক দৃঢ়তা আর উদ্ভাবনের উদাহরণ। আজও যখন কেউ কোনো অসম্ভব লক্ষ্য অর্জনের স্বপ্ন দেখে, তখন আলেকজান্ডারের উদাহরণ মনে পড়ে। সেই বিশ বছরের যুবকের, যিনি তেরো বছরে অর্ধ পৃথিবী জিতে নিয়েছিলেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো তিনি এসব শুধু তলোয়ারের জোরে নয়, বরং তার বুদ্ধি, কৌশল আর অদম্য সাহসের জোরে করেছিলেন। এই হলো মহান আলেকজান্ডারের যুদ্ধ কৌশলের অমর গাথা - এমন এক গল্প যা আজও আমাদের শেখায় যে প্রকৃত জয় শুধু শত্রুর ওপর নয়, বরং নিজের সীমাবদ্ধতার ওপর।

bn
示例
1
Default Sample
বাংলার ঐতিহ্যের কথা বলতে গেলে আমাদের মনে পড়ে যায় সেই মহান ব্যক্তিত্বদের কথা, যাঁরা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁদের অবদান আজও আমাদের পথ দেখায়, আমাদের গর্বিত করে।